সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদা………?

প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদা………?

মুফতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল: আমরা আজ যে সমাজব্যবস্থায় অভ্যস্ত, তাতে আমাদের অনুভূতিগুলোও দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখাই যেন আজকালকার যুগের সবার চিন্তাধারার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট-পাথরের দালানে থাকায় মানুষগুলোও যেন অনুভূতিহীন কলের পুতুল। পাশের দরজার প্রতিবেশীর বিপদ-আপদে, সুখ-দুঃখে সঙ্গী হওয়া তো আজকাল দূরের কথা, কেউ কাউকে চিনি না অনেক সময়। এরপরও কি দাবি করতে পারি, আমরা সত্যিকারের মুসলমান?
অথচ আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জিব্রাইল আমাকে সবসময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হলো, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন (বুখারি ৬০১৪)। প্রতিবেশীর ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে যথাসাধ্য বিনয় আচরণ প্রদর্শন করতে এবং তাদের অসুবিধা হতে পারে এমন কোনো কাজ সৃষ্টি না করার কথা বলা হয়েছে। কুরআনে মুসলমানদের প্রতিবেশীর দৈনন্দিন সব প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে (আদাবুল মুফরাদ)। আবু শুরাইহ থেকে আরেকটি হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে- রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। তখন হজরত মুহাম্মদকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর হাবিব, কে সে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদবোধ করে না, সে ব্যক্তি ইমানদার নয় (বুখারি: ৫৫৫৭)।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো আর কোনো কিছুকে তার অংশী করো না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীর প্রতি সদ্ব্যবহার করো (নিসা: ৩৬)। সাধারণভাবে বাড়ির আশপাশে যারা বসবাস করে, তাদের প্রতিবেশী বলা হয়। তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে নিকটজন, যিনি তার খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে।
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসার গুরুত্ব অপরিসীম। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মিলেমিশে বসবাস করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সুবাদে গড়ে উঠেছে প্রতিবেশী ও বন্ধুসুলভ মানসিকতা ও আচার-আচরণ। প্রতিবেশী কারা? কতদূর এর সীমা? এ প্রশ্নের জবাবে হজরত হাসান (রা.) বলেছেন, নিজের ঘর থেকে সামনে ৪০ ঘর, পেছনে ৪০ ঘর, ডানে ৪০ ঘর এবং বাঁয়ে ৪০ ঘরের অধিবাসী হচ্ছে প্রতিবেশী।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমার দুজন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের মধ্যে কার কাছে হাদিয়া পাঠাব? তিনি বললেন, যার দরজা তোমার বেশি নিকটবর্তী, তার কাছে পাঠাও (বুখারি: ৬০২০)। আবার রাসুলের (সা.) গর্বিত প্রতিবেশীরাও রাসুলের প্রতি অনেক উদার ছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেন: দুই মাস আমাদের চুলায় আগুন জ্বলেনি; কয়েকটি আনসার পরিবার রাসুলের (সা.) প্রতিবেশী ছিলেন; তাদের কিছু দুধালো উটনি ও বকরি ছিল। তারা রাসুলের (সা.) জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। তিনি আমাদের তা পান করতে দিতেন (বুখারি: ২৫৬৭)।
তোমার ঘরের দেয়াল উঁচু করে তার বাতাস বন্ধ করবে না। ফল ক্রয় করলে তাকে পাঠিয়ে দাও, না পারলে গোপন রাখো এবং নিজ সন্তানদের ফল হাতে বের হতে দিয়ো না, যেন প্রতিবেশীর সন্তান দুঃখ না পায়। নিজের রান্নাঘরের ধোঁয়া দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ো না। কিন্তু তাকে যদি খাদ্য দাও, তাহলে অসুবিধা নেই (তাবারানি)। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, কোনো প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে দেয়ালে কাঠ গাড়তে নিষেধ না করে। আবু হুরাইরাহ (রা.) বললেন, কী ব্যাপার, আমি তোমাদের রাসুলের (সা.) সুন্নাহ থেকে মুখ ফেরাতে দেখছি আল্লাহর কসম, নিশ্চয় আমি এ সুন্নাহকে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব) (বুখারি: ২৪৬৩)।
প্রতিবেশীর প্রতি অন্য কর্তব্যগুলো হলো: প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করা, কোনো জিনিস ব্যবহার করতে চাইলে তা দেওয়া। প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়া, তার বাড়িতে খাবার পাঠানো ইত্যাদি। আবুযার (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আবুযার, যখন তুমি ঝোল তরকারি রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশি করো। তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমতো পৌঁছে দাও (মুসলিম ২৬২৫)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। ওই সাহাবি (রা.) থেকেই বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মুসলিম নারীরা, কোনো প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক না কেন (সহিহুল বুখারি, ২৫৬৬ ও মুসলিম, ১০৩০)।
একজন মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের অনেক অধিকার রয়েছে। সেসব অধিকার কিন্তু আমরা প্রথমেই প্রতিবেশীর ব্যাপারে আদায় করতে পারি। তাহলে ইসলামের নির্দেশ যেমন মানা হবে, তেমনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে। এসব অধিকার বা কর্তব্যের কয়েকটি হলো, প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, তার সালামের উত্তর দেওয়া, কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং তার সেবা-শুশ্রƒষা করা, বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে দাওয়াত দেওয়া এবং তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877